মহান ভাষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ৬ ও ১১ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে উজ্জীবিত ১৯৭০ এর নির্বাচনে বাঙ্গালী জাতি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রাপ্তির আশায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে মনোনীত করার পর থেকেই পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী নানা অজুহাতে ক্ষমতা হস্তান্তর বিলম্বিত করায় প্রতিটি বাঙ্গালী তাদের স্বাধীকার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিভিন্ন প্রকাশ্য ভাষণ ও গোপন নির্দেশের মাধ্যমে গোটা জাতি বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে থাকে। মহান নেতার নির্দেশে জয় বাংলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ময়মনসিংহে গঠিত হয়। ২ মার্চ জয় বাংলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সকাল ১০টায় টাউন হল ময়দানে অভিবাদন জানাবেন বলে আগের দিন থেকে মাইকে ময়মনসিংহ শহরব্যাপী ঘোষণা হতে থাকে। জয় বাংলা বাহিনী প্রধান আবুল হাসেমের নেতৃত্বে জয় বাংলা ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সারিবদ্ধ ভাবে শহর প্রদক্ষিণ করে টাউন হল চত্বরে সমবেত হয়ে আওয়ামী লীগের সংগ্রামী নেতা রফিক উদ্দিন ভূইয়াকে সশ্রদ্ধ অভিনন্দন জানান। মুহুর্মুহু জয় বাংলা ধ্বনির মধ্যে পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে বাংলাদেশের নকশা খচিত পতাকা উত্তোলন করেন তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজিম উদ্দিন আহমেদ। অভিনন্দন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী জনাব সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, নেতাকর্মীদের মধ্যে জনাব শামছুল হক, এডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক, ইমান আলী, আনন্দমোহন কলেজের ভিপি আব্দুল হামিদ, মতিউর রহমান, আফাজ উদ্দিন, কমর উদ্দিন, এডভোকেট আনোয়ারুল কাদির, সৈয়দ আহমদ, চাঁন মিয়াসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
৭ মার্চ ১৯৭১ রেসকোর্স ময়দানে ‘‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’’। বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক আহবানের পরেই বাঙ্গালী জাতি মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগঠিত হতে থাকে। অবসরপ্রাপ্ত সেনা, পুলিশ এবং দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যগণ অত্যন্ত গোপনে অস্ত্র চালনা ও রণ কৌশল বিষয়ে শিক্ষা দান করেন। ২৫ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আক্রমণের পর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনার পর থেকে পাকহানাদার বাহিনী নিধনে মরিয়া হয়ে উঠে।
যারই ধারাবাহিকতায় খাগডহর তৎকালীন ইপিআর ক্যাম্প সংগ্রামী জনতা ঘেরাও করে এবং বাঙ্গালী ইপিআর সদস্যদের সহায়তায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে। এ যুদ্ধে ইপিআর সদস্য দেলোয়ার হোসেন ও ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের ড্রাইভার পুত্র আবু তাহের মুকুল শাহাদৎ বরণ করেন। মূলতঃ এই যুদ্ধের পর পরই ময়মনসিংহের সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত সীমান্ত ফাঁড়িগুলি বাঙ্গালী বিডিআরদের নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। নিহত পাক সেনাদের লাশ নিয়ে ময়মনসিংহবাসী বিজয় মিছিল করতে থাকে ও ধৃত অন্যান্য পাকসেনাদের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ময়মনসিংহ জেলখানায় প্রেরণ করা হয়।
যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এক সকালে পুরাতন বিডিআর ভবনের ৩য় তলার শীর্ষে হাজার হাজার লোকের জয় বাংলা ধ্বনির মধ্যে বাংলাদেশের নকশা খচিত পতাকা পতাকা উত্তোলন করেন সাবেক কমান্ডার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মোঃ সেলিম সাজ্জাদ। এ যুদ্ধে আবুল হাসেম, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, ম হামিদ, এসএম নাজমুল হক তারা, মৃত চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের (কাদু মিয়া), কেএম শামছুল আলম, শেখ হারুন, খোকন বিডিআর ও পুলিশের সদস্যসহ জয় বাংলা ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর অনেক সদস্যই অংশগ্রহণ করেন।
ময়মনসিংহ ১১নং সেক্টরের অধীন ছিল
মধুপুর যুদ্ধ
ঢাকা থেকে টাংগাইল হয়ে ময়মনসিংহের দিকে অগ্রসররত পাক সেনাদের প্রতিহত করার জন্য পুলিশ, বিডিআর, ছাত্র-জনতা মধুপুর ব্রীজের পূর্ব পাশে অবস্থান নেয় এবং প্রতিরোধ যুদ্ধ চালাতে থাকে। ১৩ এপ্রিল মধুপুর যুদ্ধের পর পাকসেনাদের মুহুর্মুহু স্বয়ংক্রিয় ভারী অস্ত্রের আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হঠতে থাকে । এ যুদ্ধে মরহুম সংসদ সদস্য জনাব শামছুল হক, পুলিশ সদস্য কেএম শামছুল আলম, জনাব আবুল হাসেম, জনাব মোঃ সেলিম সাজ্জাদ, নজরুল ইসলাম দুলাল, মোঃ ফজলুল হক, টেলিযোগাযোগের ২ জন সদস্য জনাব জিল্লুর রহমান ও জনাব আমীর হোসেনসহ জয় বাংলা ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী এবং অনেক মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করে।
ময়মনসিংহে বিমান হামলা
পাক সেনারা মধুপুর এবং গফরগাঁও হয়ে ময়মনসিংহের দিকে এগিয়ে আসতে থাকলে নেতৃবৃন্দসহ ময়মনসিংহ শহরের আপামর জনতা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলে ময়মনসিংহ শহর জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে। ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ পাকহানাদার বাহিনী বিমান বাহিনীর সহায়তায় ময়মনসিংহ শহরে প্রবেশের চেষ্টা চালায় এবং ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তর পাশে বাসষ্ট্যান্ডে এবং চলাচলরত নৌযানের উপর বিমান হামলা চালায়। এতে করে প্রায় ৭টি বাস ভস্মিভূত এবং কয়েকজন লোক আহত হয়। যার মধ্যে কৃষ্টপুরের শামছুদ্দিন ওরফে সামু মিয়া ছিলেন। অতঃপর ময়মনসিংহ থেকে সড়ক পথে হালুয়াঘাট হয়ে কড়ইতলী সীমান্ত ফাঁড়িতে বিডিআর ও ছাত্র-জনতা সমবেত হতে থাকে। পথিমধ্যে হালুয়াঘাট খাদ্য গুদাম থেকে এক বাস ভর্তি করে খাদ্য নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা কড়ইতলীর ক্যাম্প ত্যাগ করে ২৭ জন বিডিআর ও ১০/১১ জন ছাত্র-জনতা নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে পানিহাটা মিশনের পশ্চিমে গারো হাইড আউট গড়ে তোলে। এখান থেকে মাঝে মাঝে রামচন্দ্রকুড়া, হাতিপাগার, তন্তরসহ বিভিন্ন সীমান্ত ফাঁড়ী ও শত্রু সেনাদের ঘাঁটিতে আক্রমণ পরিচালনা করা হয়। ২৪ মে ১৯৭১ তারিখে অতর্কিতে পাকসেনারা মর্টারের গোলাবর্ষণ করে পানিহাটা মিশন মুক্তিযোদ্ধাদের হাইড আউটে আক্রমণ চালালে ময়মনসিংহ শহরের কৃষ্টপুরের আব্দুল মতিন শহীদ হন । প্রত্যুত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা রামচন্দ্রকুড়া সীমান্ত ফাঁড়িতে আক্রমন চালিয়ে পাকসেনাদের হটিয়ে দিয়ে সীমান্ত ফাঁড়ির সমস্ত ঢেউ টিন খুলে এনে নিরাপদ আশ্রয়ের বেড়া সৃষ্টি করে। ২৫ মে পাকিস্তানী বাহিনী অতর্কিতে বেপরোয়া গোলাগুলির মধ্য দিয়ে ভারতের ঢালু নামক স্থানে প্রবেশ করে নিরীহ শরণার্থীদের অকাতরে হত্যা করে। এখানে উল্লেখযোগ্যদের মাঝে নিহত হন বিমান বাহিনীর সদস্য আশফাক এবং জনৈক এম,পি,র সহোদর নিজাম উদ্দিন। এই যুদ্ধের বিডিআর সদস্য ছাড়াও অংশগ্রহণ করেন আবুল হাসেম, ম হামিদ, মোঃ সেলিম সাজ্জাদ, নূরুল ইসলাম, মোঃ লিয়াকত আলী, জিয়াউল ইসলামসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাগণ। এখানে উল্লেখ্য যে, বিএসএফ সুবেদার ত্রিপাল সিংসহ ৯ জন সদস্যকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
নালিতাবাড়ী ব্রীজ ধ্বংস
ইতিপূর্বে কয়েকবার ব্যর্থ হওয়ার পর ২২ মে ‘৭১ জনাব আবুল হাসেমের নেতৃত্বে ও বিডিআর সদস্য ফরহাদের সহায়তায় ৪টি কোম্পানীর সম্মিলিত প্রয়াসে রাশিয়া কর্তৃক প্রদত্ত অত্যাধুনিক বিস্ফোরক দ্রব্যের মাধ্যমে নালিতাবাড়ী ব্রীজটি ধ্বংস করা হয়। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের অন্যতম আবুল হাসেম, বিডিআর সদস্য-সুবেদার ফরহাদ, বিমান বাহিনীর সদস্য আশফাক, মোঃ সেলিম সাজ্জাদ, বাবু মান্নান, বাবু মিজানুর রহমান বিশ্বাস, জিয়াউল ইসলাম, মোঃ লিয়াকত আলী, মোঃ আকবর আলী, মোঃ নূরুল ইসলাম, মোঃ আব্দুল মতিন, মোঃ ফজলুল হকসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা ।
তেলিখালী যুদ্ধ
হিট এন্ড রান অর্থাৎ মার এবং পালাও পদ্ধতির পরিবর্তে মার এবং জায়গা দখলে রাখ এই পদ্ধতি গ্রহণ করে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী দীর্ঘ ৭ দিন যুদ্ধের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বিগ্রেডিয়ার ক্লে ও বিগ্রেডিয়ার সান্ত সিং ৯২ মাউনটেন্ট ডিভিশনের গোলন্দাজ ইউনিট মুক্তিবাহিনীর পক্ষে আবুল হাসেম মূলতঃ যুদ্ধের পরিকল্পনা করেন। যুদ্ধে যাবার একদিন আগে মোঃ সেলিম সাজ্জাদসহ ভারতীয় রাজরীফ (রাজপুত) ব্যাটালিয়ানের বিভিন্ন কোম্পানীতে সংযুক্ত কমান্ডারগণকে যুদ্ধের পরিকল্পনাসহ অন্যান্য করণীয় বিষয়ে অবহিত করেন। পরবর্তীতে যুদ্ধে যাবার পূর্বে স্ব-স্ব কোম্পানীর অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের বিষয়টি অবহিত করা হয় এবং নির্ধারিত সময়ে যুদ্ধ যাত্রা শুরু হয়। কর্তৃপক্ষ বেঁধে দেয়া নির্দিষ্ট স্থান অতিক্রম করার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এ যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ডি কোম্পানী ১২৫ জন সৈনিক রেঞ্জার্স ও রাজাকারসহ লোকবল ছিল ২৩৭ জন। এ কোম্পানীর অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন খালেক। অন্য দিকে ভারতীয় ব্যাটালিয়ানের ৫টি কোম্পানীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের ২০৪ জন যুক্ত হয়ে ৫টি ভাগে বিভক্ত হয়ে এই বিভীষিকাময় যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধে কৃষ্টপুরের আলাউদ্দিন শাহজাহান ওরফে বাদশাহ, পিয়ারপুরের রঞ্জিত গুপ্তসহ ২৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদৎ বরণ করেন। ভারতীয় পক্ষের আনুমানিক ৫৬ জন সৈন্য শহীদ হন। অপর দিকে পাকসেনাদের ১ জন পাকিস্তানী সেনা কেরামত আলী খান ও আত্মসমর্পনকৃত ৩ জন রাজাকার ব্যতীত সকলেই নিহত হন। এখানে উল্লেখ্য যে, এই তিনজন রাজাকারই ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জের অধিবাসী। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আবুল হাসেম, মেজবাহ, ওয়াজি উল্লাহ, মোঃ সেলিম সাজ্জাদ, আব্দুর রব, আব্দুর রাজ্জাক, আতাউদ্দিন শাহ, আকবর আলী, শামছুল হক বাদল, সেলিম সরকার রবার্ট, ইকরাম হোসেন মানিক, নেকবর আলী খান, ফজলুল করিম খান, দেবল দত্ত, প্রদীপ গুপ্ত, শ্রীধাম দাশসহ ২০৪ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। মূলতঃ এই যুদ্ধের পরই ময়মনসিংহের সীমান্ত অঞ্চল স্বাধীন হয়ে পড়ে।
বান্দরঘাটা যুদ্ধ
বয়সে তরুন হওয়ার কারণে মোঃ সেলিম সাজ্জাদকে কোম্পানী কমান্ডার থেকে কোম্পানী টু-আই-সিতে নিয়োগ করে তৎস্থলে হাবিলদার জিয়াউদ্দিনকে নিয়োগ করে যুদ্ধের পরিকল্পনা করা হয়। ৫ আগষ্ট ১৯৭১ এর এই যুদ্ধে মূলত নেতৃত্ব দেন জনাব মোঃ আবুল হাসেম। এই যুদ্ধে পরিমলসহ ৩ জন শাহাদৎ বরণ করেন এবং শম্ভূগঞ্জের আব্দুস ছামাদ, মুন্সির হাটের অখিল বাগিতক এবং সরিষাবাড়ীর নূরুল হকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মোঃ সেলিম সাজ্জাদ, মোঃ আকবর আলী, শামছুল হক বাদল, সেলিম সরকার রবার্ট, ইকরাম হোসেন মানিক, নেকবর আলী খান, ফজলুল করিম খান, আব্দুর রাজ্জাক আহত নূরুল হকের সহোদর তিন ভাইসহ অন্যান্য অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেন।
গোয়াতলা যুদ্ধ
নগোয়ার আব্দুর রশিদকে কোম্পানী কমান্ডার ও মোঃ সেলিম সাজ্জাদকে কোম্পানী টু-আই-সিতে করে ময়মনসিংহের বিদ্যুৎ ষ্টেশন উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। ১৭ই আগষ্ট ১৯৭১ অপারেশন শেষে ফেরার পথে গোয়াতলা বাজার সংলগ্ন নদীতে নৌকায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের এম্বুসের কবলে পরে। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় সকল অস্ত্রই নদীতে নিমজ্জিত হয়। বাকী কয়েকটি অস্ত্র ও গ্রেনেড দিয়ে প্রায় ৫ ঘন্টা শত্রুদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করে স্থানীয় জনসাধারণদের নিরাপদ আশ্রয়ে প্রেরণ করা হয়। এই যুদ্ধে বাঘমারার ইদ্রিস আলম শাহাদৎ বরণ করেন। মোঃ আব্দুর রশিদ, মোঃ সেলিম সাজ্জাদ, মোঃ আকবর আলী, শামছুল হক বাদল, সেলিম সরকার রবার্ট, ইকরাম হোসেন মানিক, হাসান আহমেদ আনসারী, বাঘমারার নাজিম উদ্দিন, গোয়াতলার মোঃ রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেন।
নান্দাইল যুদ্ধ
নান্দাইল থানার অন্যতম যুদ্ধ নান্দাইল যুদ্ধ ১৭ নভেম্বর ১৯৭১ এ সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হক, ইলিয়াস উদ্দিন ভূইয়া ও জিল্লুল বাকী শাহাদৎ বরণ করেন। একই দিনে থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহনেওয়াজ ভূইয়াসহ ২৭ জন নিহত হন। নান্দাইল উপজেলায় ৩ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন তারা হচ্ছেন- আব্দুস ছালাম ভূইয়া (বীর প্রতীক), আনিছুল হক সঞ্জু (বীর প্রতীক) ও আব্দুল জব্বার (বীর প্রতীক)।
এ ছাড়াও ২৭ এপ্রিল ‘৭১ ফুলবাড়ীয়া থানার লক্ষ্মীপুর প্রতিরোধ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ২৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। তাছাড়া উক্ত থানার উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ সমূহের মধ্যে রাঙ্গামাটিয়া, আছিম, কেশরগঞ্জ যুদ্ধ অন্যতম। ২৬ জুন ‘৭১ মেজর আফছারের নেতৃত্বে ভাওয়ালিয়াবাজু যুদ্ধে ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। এ যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান শহীদ হন। মেজর আফছারের নেতৃত্বে বাটাজোর, বড়চালা, সোনাখালি, পাড়াগাঁও অন্যতম।
মুক্তাগাছা
মুক্তাগাছা থানার বটতলা, চরাঘাটি, মুক্তাগাছা থানা ও ভিটি বাড়ী যুদ্ধ অন্যতম। এ সকল যুদ্ধে রেফাছ উদ্দিন, ডাঃ বাবর আলী, রিয়াজ উদ্দিন, জুবেদ আলী ও ইব্রাহিম সুবেদার এর নেতৃত্বে বিপুল পরিমাণ মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। এ সকল যুদ্ধে অনেক পাকসেনা ও রাজাকার প্রাণ হারায়।
মুক্তিযুদ্ধে ময়মনসিংহ জেলা ১১নং সেক্টরের অধীনে ছিল। ১১নং সেক্টরের মধ্যে যে সকল অঞ্চল ছিল তা হলো- ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জের পশ্চিম অঞ্চল ও কুড়িগ্রাম জেলার যমুনার পূর্ব তীরস্থ অঞ্চল। এ সেক্টরের প্রধান কার্যালয় ছিল মহেন্দ্রগঞ্জ। সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন যথাক্রমে- কর্ণেল আবু তাহের ও হামিদুল্লাহ খান, ১১ সেক্টরের ভারতীয় অধিনায়ক ছিলেন বিগ্রেডিয়ার সান্থ সিং। এ অঞ্চলের যুবকদের জন্য প্রতিষ্ঠিত ঢালু ইয়ুথ ক্যাম্পের প্রধান ছিলেন অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও মহেশখোলা ইয়ুথ ক্যাম্পের প্রধান ছিলেন- আনিসুর রহমান।বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিলো প্রায় ৫ হাজার।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস